,

ফরিদপুর-৩: নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে চলছে ‘আগুন’ নাটক

জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর: ফরিদপুর-৩ আসনে কয়েকটি নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে অনেকেই নৌকার প্রার্থীর নতুন নাটক হিসেবে দেখছেন। তারা বলেছেন, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ. কে. আজাদের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।

এ জন্য পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার নীল নকশা থেকে নৌকার প্রার্থীর লোকজন নিজেদের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়ে অন্যদের ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছে।

জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শাহ আলম মুকুল বলেছেন, ঈগলের জনসমর্থন দেখে একটি পক্ষ বিভ্রান্তিকর আচরণ শুরু করেছে। নিজেরাই নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদসহ ঈগলের পক্ষে কাজ করা ১০ নেতাকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীর বাসভবনে এ. কে. আজাদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী জাহিদ। এ সময় অব্যাহতি পাওয়া ১০ নেতাও উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে এ. কে. আজাদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সৈনিক হিসেবে আমি আওয়ামী লীগ সরকারের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বিশ্ব-প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য যা প্রয়োজন, সব করার চেষ্টা করছি। এ লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচনে এসেছি। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ– এ চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার মিছিলে শরিক হতে প্রস্তুত। আমি নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র‍্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখব।

তিনি বলেন, এ আসনে ঈগলের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তা নস্যাৎ করতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি (শামীম হক) ও সাধারণ সম্পাদক (শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ) বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি চিঠি ভাইরালের চেষ্টা করেছেন। তাদের (সভাপতি-সম্পাদক) স্বাক্ষরিত চিঠিতে আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যা দলের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নেতা দূরের কথা, তৃণমূলের কোনো কর্মীকেও অব্যাহতি কিংবা বহিষ্কারের ক্ষমতা জেলা কমিটির নেই।

এ সময় শওকত আলী বলেন, কাউকে অব্যাহতি কিংবা বহিষ্কার করতে হলে যেসব নিয়ম অনুসরণ করতে হয়, তার কিছুই করা হয়নি। ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী নিজের পরাজয় নিশ্চিত জেনে সাধারণ মানুষের মাঝে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সভাপতি ও সম্পাদক নগরকান্দায় নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে ‘সন্ত্রাসী জামাল খানকে’ (জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক) স্বতন্ত্র প্রার্থী করেছেন। তথাকথিত অব্যাহতির চিঠিতে কিন্তু জামালের নাম নেই। শামীম হক সাজাপ্রাপ্তদের নিয়ে ফরিদপুরে ত্রাস কায়েম করছেন। গুন্ডাবাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, যার মাধ্যমে তিনি বিএনপির ভোট বর্জন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।

এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বিপুল ঘোষ বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে এ নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় দলের ১৩২ নেতা ঈগল ও ট্রাক প্রতীকে লড়ছেন। এখন পর্যন্ত কোনো জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। কারণ তারা ভালো করেই জানে, দলের গঠনতন্ত্র এ সুযোগ জেলা কমিটিকে দেয়নি। নির্বাচনের দু’দিন আগে কয়েকজনকে অব্যাহতি দিয়ে এখানে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফরিদপুরের জনগণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ঈগল প্রতীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী শামীম হক ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, নির্বাচনী ক্যাম্পে নৌকার প্রার্থীর লোকজন নিজেরা আগুন দিয়েছে। অথচ থানায় বেছে বেছে আমার নেতা-কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঘায়েলের চেষ্টা করছে। নৌকার ক্যাম্পে চলছে আগুন নাটক। সামনে এমন নাটক আরও হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন, কোষাধ্যক্ষ যশোদা জীবন দেবনাথ, সদস্য সুবল চন্দ্র সাহা প্রমুখ।

 

এই বিভাগের আরও খবর